শুক্রবার, ২৭ মার্চ, ২০১৫

হেনাবু

পৃথিবী.....
আহ!
আলো,বাতাস।
সবুজ গাছপালা।
পাহাড়,চর।
বৃষ্টি, কুয়াশা,ঝড়!
আরও কত রূপ!
আহ,পৃথিবী!
পিলপিলিয়ে হেঁটে বেড়ানো মানুষ। বিড়বিড় করা খেয়ালী কবি! আনমনা প্রেমিক প্রেমিকা!
একটা সময় আমার নিজের ও প্রেম করার স্বপ্ন ছিল। ভাবতাম,খুব আপন একটা ভালবাসার মানুষ থাকবে। বেশ কিছু পাগলী পাগলী স্বপ্ন থাকবে। তাতে মায়া থাকবে। অভিমানী কান্না থাকবে! ভুল ছিলাম কি? চাওয়াটা ও কি বেশী ছিল?
অথচ,এই পৃথিবীর ই একটা কোণে আমার জন্ম। মায়ের মত মায়াবতী কোন দেশে। সবাই আদর করে ডাকে,বাংলাদেশ!
আমি জানতাম,পূর্ব পাকিস্তান.......!
অর্জুনতলা। নোয়াখালীর ছোট্ট একটা গ্রাম! শান্তির নীড়। যেন স্বর্গ থেকে তুলে আনা হয়েছে একে। এ গ্রামেই আমার জন্ম! আবছা মনে পড়ে,মায়ের ফর্সা ক্লান্ত মুখটা। ঘামে ভেজা হাসি। আমি অবাক হয়ে ভাবতাম,এত্তো মায়া! কারো হয়? আচ্ছা, মা কি এখনও বেঁচে আছেন? এপাশ ওপাশ তাকিয়ে,আগের মত আমাকে খোঁজেন?
আর রুনু? ও কতটুকু হয়েছে? তার হেনাবুর কথা সে মনে রেখেছে তো? বাবু ফিরেছিল তো? নাকী.......
কতগুলো দিন পেরিয়ে গেল! অথচ মনে হয়,এইতো সেদিন ও এই গ্রামের প্রতিটা অলিগলি চষে ফিরেছি আমি! মাঠের পর মাঠ,সরিষাক্ষেত সব ছুঁয়ে দৌড়েছি। খাল-পুকুর দাপিয়ে বেড়িয়েছি। পাকা কাঁচা ফলের নামকরা তস্কর হয়েছি!
স্মৃতিগুলো কত স্পষ্ট!
কত জীবন্ত!
মনে হচ্ছে কান পাতলে এখনও শুনতে পাব,রুহুল চাচার চীৎকার। রাগে উনি ক্ষেপা ষাড়ের মতই চেঁচাতেন। মায়ের কাছে এসে তার সে কি নালিশ! হাত পা নেড়ে রাগী সব অভিযোগ!
"ভাবী,আন্নের ডাকাইত মাইয়া আঁর হুরা গাছ সাফ করি দিসে! ডাক দিতাম গেছি,হেতি কানেও তুলে ন! ব্যবস্তা নেন কইলাম। বিয়া দিয়া দেন! নইলে,আরও কত আকাম কইরব আল্লা মালুম!"
তারপর মায়ের অসহায় মুখ। আমার সাথে কথা বন্ধ করে দেয়া। খেতে ও না ডাকা। সব শাস্তি সহ্য হত আমার। মেনে ও নিতাম। কিন্তু মায়ের সাথে কথা না বলে থাকাটা যে কতটা যন্ত্রণার ছিল,বলে বোঝানো যাবেনা!
অথচ সেই মায়ের সাথেই এখন বছরের পর বছর কথা হয়না আমার!!! দেখা হয়না! একসাথে পুকুরঘাটে বসে আকাশ পাতাল গল্প হয়না! কিচ্ছু না।
রুনু সবসময় দুঃখ করে বলত,
"হেনাবু,আম্মা কি তোমার বান্ধবী? এত কীসের গল্প করো,তোমরা? আমাকে দলে নাওনা কেন? আমিও গল্প শুনব।"
আমি ঠোঁট টিপে হাসতাম। চোখজোড়া বড় বড় করে,ওর কানের কাছে মুখ নিয়ে ষড়যন্ত্রী গলায় বলতাম,
"আমাদের গল্প হচ্ছে.......তোকে তো বলা যাবেনা! যা ভাগ!!!"
ও রাগ করত। গাল ফুলিয়ে রাখত সারাদিন। আমি সেই রাগ আরও বাড়ানোর জন্য ছড়া কাটতাম। সুর করে বলতাম,
রুনুঝুনু টুনটুনু!
রাগ করেছে রাগ!
গল্প নাকি শুনবে রুনু।
আমি বলেছি,ভাগ!
বেচারী! ছড়াটা ছিল ওর জন্য মানসিক যন্ত্রণার মত। শুনলেই দুই হাতে কান চেপে ধরে,চেঁচামেচি করত। মায়ের কাছে নালিশ করত,আমার নামে। আমি তবু সুযোগমত ছড়াটা ঠিকই শোনাতাম। আর বেচারী কাঁদো কাঁদো চেহারায় বলত,
"হেনাবু আমাকে ভালবাসেনা!"
কথাটা শুনে,আমার মায়া হত। মনে মনে আওড়াতাম,
"ধুর পাগলী! তোকে তো অনেক ভালবাসি!"
আর মুখে দ্বিগুণ উৎসাহ নিয়ে চেঁচিয়ে বলতাম,
"...........গল্প নাকি শুনবে রুনু।
আমি বলেছি,ভাগ!"
বাবু অবশ্য খুব গম্ভীর থাকত। পিঠাপিঠির ভাইবোন আমরা। আমার ঠিক দেড়বছরের ছোট ও। কিন্তু একটা আফসোস সবসময় ছিল! বাবু আমাকে কখনও বুবু কিংবা আপা ডাকেনি! এ নিয়ে কত ঝগড়া করতাম! তবু ভাইটা আমার চুপচাপ নিজের মত থাকত। ভুল মেনে নিয়ে হার যেমন স্বীকার করতনা,তেমনি আমার ঝগড়া ও থামাত না! খালি ঠোঁট চেপে হাসত। আচ্ছা, বাবু কি এখনও আগের মত শান্ত আছে? চশমা পরে এখন? সবচেয়ে বড় কথা,ও ভাল আছে? ওর সেই চলে যাওয়াটা! এখনও চোখে ভাসে! এখনও মনে হয়,হাত বাড়ালেই ওকে ছুঁয়ে ফেলব। ভাগ্য এমন কেন হয়?
একরাতে,বাবুর সাথে অনেক ঝগড়া করলাম। অনেক। হুমকি দিলাম,মাকে বলে দিব সব! কতটুকুন বয়স তখন ওর? মাত্র সতের! আর ও কিনা,পাড়ার আসাদ ভাইর কাছে বায়না ধরেছিল যুদ্ধে যাবে! আমি বাবুকে অনেক বোঝালাম। শেষ পর্যন্ত হুমকি ও দিলাম।
"ভাই তুই যাসনে। মা কষ্ট পাবে। বাবা শহর থেকে ফিরে এসে যখন শুনবে তুই নেই,রাগ করবে। তোর সাথে আর কখনও কথা বলবেনা!"
ও কিছু না বলে হাসল। ছোটদের পাগলামী দেখে বড়রা যেমন হতাশামাখা হাসি হাসে,ঠিক তেমন। তারপর আলো নিভিয়ে শুয়ে পড়ল। আমি ভাবলাম,এ যাত্রায় বুঝি সে মত বদলেছে! শুয়ে পড়লাম আমিও। কিন্তু মনের কোথাও অচেনা একটা ভয় উঁকি দিচ্ছিল বারবার। দু' চোখের পাতা এক করতে পারছিলাম না।
মাঝরাতের পরে,হঠাৎ তন্দ্রা কেটে গেল আমার। ধড়মড় করে বিছানায় উঠে বসলাম। কিছু না ভেবেই হারিকেন হাতে,ছুটলাম বাবুকে দেখতে। কিন্তু ওর বিছানা শূণ্য। আমি হতবিহ্বলের মত ওর বিছানা ছুঁয়ে দেখতে লাগলাম। কখন গেছে,আমার ভাইটা?
"হেনা!"
চমকে তাকিয়ে দেখি,ও জানালার ওপাশটায় দাঁড়িয়ে ডাকছে আমাকে। আধো আলো ছায়ায় বুঝতে পারছিলাম না,ওর চেহারায় কীসের ছাপ! আমি গ্রীলে হাত রেখে তাকালাম ওর চোখে। সেখানে বিষণ্ণ দৃষ্টি। গভীর বিষণ্ণতা। হাহাকার জন্মানো বিষণ্ণতা! ফিসফিসিয়ে বললাম,
"না গেলে,হয়নারে বাবু?"
সে হাসল। ছোটদের পাগলামী দেখে,বড়রা যেভাবে হাসে! হাসিটা ঠোঁটে রেখেই মাথা নেড়ে বলল,
"হয়নারে। আমাদের তরুণদের ই হাল ধরতে হবে। তোকে বলিনি,শেখ সাহেবের ভাষণের কথা? দেশটা আমাদের। একে শত্রুর হাত থেকে বাঁচানোর দায়িত্ব তাহলে আমাদের উপরই বর্তায়,তাইনা?"
আমি তবু কিছু একটা বলতে চাইছিলাম। ভাইটা সুযোগ দিল না। গ্রীলের ফাঁকে আঙ্গুল রেখে,আমার হাত ছুঁইয়ে দিল। তারপর বলল,
"দেশ স্বাধীন হলে,তোকে বুবু ডাকব। তবু উর্দুতে কথা বলার অসম্মান মেনে নিতে বলিসনারে বোন। মা আর রুনুর খেয়াল রাখিস। সাথে নিজেরও। আমি মাঝে মাঝে এসে,দেখে যাব তোদের। এখন যাইরে!"
আমি প্রায় দমবন্ধ করে তাকিয়ে দেখলাম,চাঁদের আলোয় আমার ভাইটা হেঁটে হেঁটে বহুদূরে চলে যাচ্ছে! ধীরে ধীরে অদৃশ্য হচ্ছে আঁধারে। আমার পিঠাপিঠি ভাইটা। মাত্র সতের বছর বয়স তখন তার! কীভাবে যুদ্ধ করবে,ও? আমি অব্যক্ত যন্ত্রণায় পাথরের মত বসেছিলাম। বাকী রাতটুকু। মনের কোন এককোণে ক্ষীণ আশা ছিল,বাবু ফিরে আসবে! আমাদের ছেড়ে থাকার প্রশ্নই আসেনা ওর। অভ্যাস নেই তো! কখনও ছিল না। ছোটবেলায় একবার ফুপি ওকে বেড়াতে নিয়ে গিয়েছিলেন। কয়েকদিনের জন্য। অথচ সকালে ঘুম ভাঙ্গার পর দেখি,বাবু কেমন গুটিসুটি মেরে আমার পাশে ঘুমিয়ে আছে। ঐটুকুন একটা বাচ্চা কী করে রাতের অন্ধকারে পথ চিনে বাড়ি ফিরল,তা আজও একটা রহস্য আমাদের জন্য! তারপর থেকে মা ওকে কোথাও একা পাঠান নি। সে নিজেও বাড়ি থেকে দূরে থাকতে চাইত না! ভাবলাম, আজ ও তাই ঘটবে। সকালে দেখব,ও ঠিকই ওর বিছানায় ঘুমোচ্ছে!
কিন্তু বাবু ফিরল না।
মা প্রচন্ড ধাক্কা খেলেন। একমাত্র ছেলেটা এভাবে ঘর ছাড়বে,কল্পনায় ছিলনা তার।
অবশ্য দিন কয়েকের মাঝেই আমি আবিষ্কার করি,মা খুব দৃঢ়তার সাথে নিজেকে সামলে নিয়েছেন। তার সমস্ত দুঃশ্চিন্তা এখন আমাকে ঘিরে। কে যেন বলেছিল,মিলিটারিরা যুবতী মেয়েদের তুলে নিয়ে যায়! তারপর মেয়েগুলোর খোঁজ পাওয়া যায়না আর।
ধীরে ধীরে সময় পেরুচ্ছিল। বাবা শহর থেকে ফিরে এলেন। সারাদিন প্রাণান্তকর চেষ্টা করেন,আমাদের হাসিখুশী রাখার। মাঝরাতে চাপা কষ্ট নিয়ে জেগে থাকেন,নিজেই! কত রাতে যে উনার কান্না শুনে,ঘুম ভেঙ্গেছে আমার! চাপা আর্তনাদ গুলো মিলিয়ে যেত রাতের আঁধারে। কিংবা বাতাসে ভেসে চলে যেত,দূরে কোথাও! আচ্ছা, সে আর্তনাদ বাবুর কানে পৌছাতো কখনও? মনে হয় পৌছাতো!
নাহলে বাবা ফিরে আসার একসপ্তাহ পর,ও কেন এলো?
আমার স্পষ্ট মনে আছে। সেদিন আমাবশ্যার রাত ছিল। বাইরে ঘুটঘুটে অন্ধকার। এক হাত দূরের জিনিস ও চোখে পড়েনা। আমি রুনুর মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছিলাম। ও ঘুমোতে চাইছিল না। মনে হল,ভাইকে মনে পড়ছে তার। হঠাৎ জানালায় টোকার শব্দ। রুনু লাফ দিয়ে উঠে বসে,আমাকে জড়িয়ে ধরল। চোখজোড়া চেপে বন্ধ করে রেখেছে! ভয়ে,ছোট্ট শরীরটা কাঁপছিল ওর!
"হেনাবু,ভূত...."
ওকে চুপ করতে ইশারা করে,বাইরের দরজার দিকে এগিয়ে গেলাম। কেউ বলে দেয়নি আমাকে। তবু বুঝেছিলাম,বাবু এসেছে! হারিকেন নিয়ে দরজা খুলতেই দেখি,বাবু হাসিমুখে দাঁড়িয়ে আছে। আমার বাচ্চা ভাইটার মুখভর্তি খোঁচা দাড়ি। শক্ত করে,দু' হাতে জড়িয়ে ধরলাম ওকে। কেঁদে উঠলাম এরপর। বাবু আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিল। ভাঙ্গা গলায় বলল,
"এজন্যই তোকে আপু ডাকিনা। বড়দের এভাবে কাঁদতে হয়? আল্লাহ্‌ ভুল করে তোকে আগে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন! নয়ত বড় হওয়ার কথা ছিল আমার!"
আমি আরও শক্ত করে ওকে আঁকড়ে ধরলাম। কান্না কিন্তু থামছিলই না! চেষ্টাও করছিলাম না থামানোর।
"দেশ স্বাধীন হলে,হেনা তোকে ভাইয়া ডাকবে। আমি নিশ্চিত করলাম।"
কথাটা বলেই বাবা পেছন থেকে আমাদের দুই ভাইবোন কে জড়িয়ে ধরলেন। রুনু আমাদের চারপাশে চক্কর কাটতে লাগল। রিনরিনে গলার অভিযোগ চলছিল সাথে।
"তোমরা আমাকে ভালবাসো না কেন? আমাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদো না কেন?"
বাবু পরের রাতেই চলে যায় আবার। অন্ধকারে ওর পিছু পিছু অনেকটা পথ গিয়েছিলাম আমি। ও টের পায়নি একটুও। মনে হচ্ছিল, আরেকটু থাকি ভাইয়ের সংস্পর্শে! যদি আর না দেখা হয়। চারপাশ থেকে যে খবরগুলো কানে আসছিল, তার একটা ও ভাল নয়। অশুভ। রক্ত। আর মৃত্যু। বাবু তখন বাঁশের সাঁকোটা বেয়ে,খাল পেরুচ্ছিল। ওকে অনুসরণ করতে গিয়ে,পানিতেই পড়ে যাচ্ছিলাম প্রায়। কেউ একজন ধরে ফেলল পেছন থেকে। কানের কাছে পরিচিত গলায় বলে উঠল,
"লুকিয়ে কিছু করতে হলে,চোখ কান খোলা রাখতে হয়! এতরাতে না বেরুলে,পারতেনা?"
আমি খুব সাবধানে দীর্ঘশ্বাস চাপলাম। লোকটার উপর ভয়ংকর রেগে থাকা সত্ত্বেও, শান্ত রইলাম পুরোপুরিভাবে।
"আসাদ ভাই,কাজটা ঠিক হয়নি। আপনি আমার বাচ্চা ভাইটাকে যুদ্ধে নিয়ে গেলেন? ও যুদ্ধের কী বোঝে?"
আসাদ ভাই মৃদু হাসলেন। আমার রাগ তাতে অনেকটাই কমে গেল।
"তুমি একটা শিক্ষিত মেয়ে,হেনা। তোমার ভাইয়ের মত হাজারো ছেলে যুদ্ধ করছে আজ। ওদের জন্য মন খারাপ না করে,দোআ করো! চলো,তোমাকে পৌছে দিই।"
প্রতিবাদ করতে গেলাম। উনি শুনলেন না। আমার হাত ধরে,দ্রুত হাঁটতে লাগলেন। আমি চুপ করে রইলাম। অন্ধকারে উনাকে দেখতে না পেলেও, মনে মনে চেহারাটা কল্পনা করে নিলাম। বাবার স্বপ্ন,আসাদ ভাইকে মেয়ের জামাই বানাবেন। পরিস্থিতি ঠিক থাকলে,এতদিনে হয়ত....
"হেনা,জলিল তোমাকে কী বলেছে?"
অবাক হলাম খুব! আসাদ ভাই এ কথা কেমন করে বললেন? জলিল আমাদের গ্রামেরই ছেলে। কখনও স্কুলের ধারেকাছে ও যায়নি। অথচ তার ভাব দেখে মনে হয়,সে বুঝি কোন রাষ্ট্রপ্রধানের ছেলে! চেয়ারম্যান বাপের দাপট বলে কথা!
"সে আমাকে বিয়ে করতে চায়। বলেছে,রাজী না হলে পাশের গ্রামের মিলিটারিদের গিয়ে বলবে আমি মুক্তিযোদ্ধার বোন। বাকী ব্যবস্থা তখন ওরাই নিবে!"
টের পেলাম,আসাদ ভাইয়ের হাতের মুঠো শক্ত হয়ে যাচ্ছে! আমি স্বান্তনা দেয়ার ভঙ্গীতে বললাম,
"বাদ দিন তো! ও আমার কিছু করতে পারবেনা। ঠাট্টা করেছে হয়ত। সত্যি সত্যি তা করবে নাকী? "
কথাটা বলার সময় আমি তাই ভেবেছিলাম। কিন্তু,ভাবনা এবং বাস্তবতার মাঝে নিষ্ঠুর তফাৎ!
দিনটা ছিল শুক্রুবার। বাবা জুম্মার নামাজ পড়তে মসজিদে গিয়েছিলেন। উনি ফিরলে সবাই একসাথে খাব,তাই অপেক্ষা করছিলাম সবাই। কিন্তু বাবা ফিরলেন না। বিকেল পর্যন্ত অপেক্ষা করে যখন সিদ্ধান্ত নিলাম খুঁজতে বেরুবো,ঠিক তখনই উনি ফিরে এলেন। কেমন যেন বিধ্বস্ত দেখাচ্ছিল তাকে! শুনলাম,গ্রামে মিলিটারি এসেছে। ডাকবাংলোয় নিজেদের ঘাঁটি গেড়েছে। বাবা আমার বাড়ি থেকে বের হওয়া বন্ধ করে দিলেন। প্রতিবাদ করলাম না। মেনে নিলাম।
সারাদিন চুপচাপ নিজের ঘরেই কাটালাম। শুয়ে বসে। আমি কখনও দিনের বেলা কিংবা সন্ধ্যায় ঘুমাই না। কিন্তু সেদিন কী হয়েছিল, কে জানে! বিকেল থেকেই প্রচন্ড ঘুম পাচ্ছিল। ঘুমিয়ে ও পড়লাম। ঘুম ভাঙ্গল চীৎকার, চেঁচামেচির শব্দে। ছুটে বেরিয়ে এলাম। দেখলাম,বাবা ধস্তাধস্তি করছেন দুইজনের সাথে। তার মাথা থেকে রক্ত গড়াচ্ছে। লোকগুলোর পরনে খাকি পোশাক। মিলিটারি!!!
অন্যদিকে মাকে টানা হেঁচড়া করছে আরেকজন! রুনু মায়ের আঁচল চেপে ধরে,চেঁচিয়ে কাঁদছে। কে যেন ছুটে এসে,আমার হাত চেপে ধরল! চমকে তাকিয়ে দেখি,চেয়ারম্যানের বখাটে ছেলেটা। জলিল! আমি হাত ছাড়িয়ে নেয়ার জন্য জোরাজুরি করতে লাগলাম। সে শক্ত করে আমার হাত ধরে রেখে কিছুদূরে দাঁড়ানো একজন কে বলল,
"সার,ইয়ে খুবসুরৎ লাড়কি কো লেনে হাম আপকো কাহা থা। ইয়ে উস মুক্তি কা বেহেন হ্যায়।"
"বহুত খুব। ইসে লে চালো। বেহেন কো ছোড়ানে,ভাই জারুর আয়েগা! দ্যে আর ইমোশনাল ফুল,আফটার অল। বাকি কো ছোড় দো।"
আমি মায়ের দিকে তাকালাম। তিনি বাবার নিশ্চল শরীরটার পাশে মাটিতে বসে আছেন। তাকে ভয়ংকর বিধ্বস্ত দেখাচ্ছিল। বাবার মাথা আঁচল দিয়ে চেপে ধরে,একদৃষ্টে বাবাকে দেখছিলেন। দৃষ্টি শূণ্য। তার সবুজ শাড়িতে কালচে রঙ্গের নকশা তৈরি হচ্ছিল। আমি অস্ফুট গলায় ডাকলাম,
"মাগো...ও মা..!"
আর কোন শব্দ খুঁজে পাইনি আসলে। ওরা যখন আমাকে টেনেহিঁচড়ে নিয়ে যাচ্ছিল,তখন শেষবারের মত রুনুর কান্না শুনলাম। ও কাঁদতে কাঁদতে বলছিল,
"মা,হেনাবু কোথায় যায়? একা কেন যায়? মা,হেনাবুকে ধরো। আমিও যাব।"
ডাকবাংলোটা বাজারের পাশেই। ওরা আমাকে এখানে এনে এক রুমে তালা দিয়ে রাখল। টের পেলাম,আমি একা নই। আরও অনেকেই আছে। আলো আঁধারিতে ছায়া ছায়া শরীরগুলো খুব একটা স্পষ্ট না হলেও, নিঃশ্বাসের মৃদু শব্দে প্রাণের অস্তিত্ব ঠিকই টের পাওয়া যায়। দেয়ালে হেলান দিয়ে বসে ভাবলাম,এখান থেকে বের হওয়ার কি সত্যি কোন উপায় নেই? বাবার জন্য দুঃশ্চিন্তা হচ্ছিল! নিজেকে বোঝালাম বাবা হয়ত আঘাতের চোটে জ্ঞান হারিয়েছেন। খারাপ কিছু ঘটেনি! নিজেকে নিয়ে এখন ভাবা দরকার। বাবুর কথা মনে পড়ল। ও জানতে পেরে,বোকার মত কিছু করে বসবেনা তো? নিজেকে ওদের হাতে তুলে দেবে নাতো,আবার? পরক্ষণেই মনে হল,এমন হবেনা। আসাদ ভাই আছেন। উনি সামাল দেবেন। আচ্ছা, উনি নিজেই বা কীভাবে নেবেন? খুব রেগে গিয়ে উল্টা পাল্টা কিছু করে বসবেন? নাকী শান্ত মাথায় বুদ্ধি কাজে লাগিয়ে,আমাকে উদ্ধার করতে আসবেন? যাই হোক,কয়েকটা দিন তো পেরিয়ে যাবে! ততদিনে আমি....ভাবতে চাইলাম না তখন আর। ক্লান্ত ভঙ্গীতে বসে রইলাম।
এর পরের কয়টাদিন নরক যন্ত্রণায় কাটল আমার! সারা শরীরে ফুটে উঠতে লাগল অসংখ্য ক্ষত। কষ্ট। হিংস্র জানোয়ারগুলোর নখ আর দাঁতের আঁচড়! রাতের পর রাত,দিনের পর দিন খুবলে খেয়েছে তারা আমাদের। জ্বলন্ত সিগারেট ঠেসে ধরেছে,শরীরের স্পর্শকাতর জায়গাগুলোতে। ইচ্ছেমত নকশা করেছে সেখানে। পুরোনো ক্ষত শুকোনোর আগে হাজারটা নতুন ক্ষতের জন্ম দিয়েছে বারবার! রক্ত। কষ্ট। যন্ত্রণা! কতরাত যে ব্যাথা, যন্ত্রণায় চেঁচিয়ে জ্ঞান হারালাম তা একমাত্র সৃষ্টিকর্তা জানেন। একমাত্র ঈশ্বর জানেন। এই কষ্ট প্রকাশের ভাষা কারো কাছে নেই পৃথিবীতে। কারো নয়।
এই অন্ধকার ঘরে,ধুঁকে ধুঁকে কত মেয়ে মরেছে তার হিসেব কে করবে? কে? রক্তাক্ত দেহগুলোকে মানুষ বলে মনেই হয়না! একেকটা মাংসপিণ্ড! জীবন নেই,প্রাণ নেই,স্বপ্ন,ভালবাসা কিচ্ছু নেই। আছে শুধু মৃত্যুর অপেক্ষা! আমরা প্রতিটা বন্দিনী একযোগে,চেঁচিয়ে কিংবা ফিসফিসিয়ে নিজেদের মরণ কামনা করি! হায়রে মৃত্যু ও যে করুণা করেনা আমাদের! এত আর্তনাদ ও সৃষ্টিকর্তার কানে পৌছায় না।
এক বিকেলে,হাঁটুতে মুখ গুঁজে বসেছিলাম। এখানে দিন রাতের হিসেব নেই। হিসেব রেখেও বা কী হবে? যখন তখন ঠিকই পিষ্ট হয় ক্লান্ত শরীরটা! কেউ কি সময়ের হিসাব করে? নাকী করুণাবশত একদন্ড রেহাই দেয়?
তবু জানতাম কিংবা বুঝেছিলাম,সময়টা বিকাল ছিল। বিধ্বস্ততের মত বসে আরেকটা যন্ত্রণাময় রাতের অপেক্ষা করছিলাম আমরা। হঠাৎ চেঁচামেচি আর গোলাগুলির শব্দ কানে এলো। সাথে গগনবিদারী আর্তনাদ। এভাবে বেশ কিছুক্ষণ চলার পর আমাদের বন্দীশালার একমাত্র দরজাটা হাট করে গেল। আলো অসহ্য লাগায় চোখ বুজে ফেললাম। গায়ের শতছিন্ন কাপড়টুকু টেনেটুনে শরীর ঢাকার ব্যর্থ চেষ্টা চলছে সাথে!
"হেনা! তুই কইরে বোন?"
পরিচিত কন্ঠে কে যেন ডাকছে। কি হাহাকার সে ডাকে! আমি খুব ধীরে চোখ মেলে দেখলাম,বাবু আমার উপর ঝুঁকে আছে। তার দৃষ্টিতে সীমাহীন কষ্ট। দুঃখ। সাথে বোনকে খুঁজে পাওয়ার এক চিলতে আনন্দ। এসময় আসাদ ভাই কোত্থেকে যেন ছুটে এসে,একটা চাদর জড়িয়ে দিলেন গায়ে। টেনে দাঁড় করালেন আমাকে। বাবু তখনও নির্বাক। শুধু ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে দেখছে আমাকে! যেন কখনোই দেখেনি! আসাদ ভাই ওকে তাড়া লাগালেন। বললেন,
"বাবু,ওভাবে দাঁড়িয়ে থেকোনা। শাহেদা আপাকে বলে,অন্য মেয়েদের বের করার ব্যবস্থা করো। কুইক। জায়গাটা পুরোপুরি নিরাপদ নয়।"
আসাদ ভাইর কথায় ওর সংবিৎ ফিরল। আমাকে একবার আলতো করে ছুঁয়ে দিয়ে,টলতে টলতে বেরিয়ে গেল সে। আমার খুব ইচ্ছে হল,ওকে থামাই। জড়িয়ে ধরে এতদিনের সব কষ্ট বের করে দিই,কান্নার ছলে। কিন্তু পারলামনা।
আসাদ ভাই খুব শক্ত করে,আমার হাত ধরে হাঁটছেন। টের পেলাম,অদ্ভুত এক ক্লান্তি ভর করেছে। শরীরে। মনে। অস্তিত্বে। আমরা ডাকবাংলো পেরিয়ে অনেকদূর চলে এসেছি। আশেপাশে আরও অনেকেই আছে। সবাই আমার মত মেয়েগুলোকে প্রায় বয়ে নিয়ে চলছে। যেন পরম মমতাময় মায়ের রূপ একেকজন।
আমি এপাশ ওপাশ চোখ বুলিয়ে,বাবুকে খুঁজলাম। কোথায় ও? আচ্ছা, ও কি আমাকে ঘেন্না করছে? নাকী ভয় পাচ্ছে,দেখে? আমি কি আসলেই বেঁচে আছি! প্রতিনিয়ত এতবার মরে গিয়েও বেঁচে আছি? কেন? জীবনের কোন উদ্দেশ্য আছে কি আমার? থাকলে,সেটা কী? পাশ থেকে কেউ একজনের কথা কানে এলো।
"এইযে রাশেদ,এটা দেখছো? এটাকে আমরা আদর করে আনারস বলি। সত্যিকারের আনারস নয় কিন্তু। উপরের এই পিনটা আছেনা? এটা খুলে ফেলার চার সেকেন্ড পর,এই আনারস ফাটবে। নীরিহদর্শন আনারস তখন হয়ে যাবে,কিলার মেশিন। কিলার মেশিন বোঝো? কিলার মেশিন হচ্ছে........."
আমি সাবধানে গলা বাড়িয়ে নীরিহদর্শন আনারসটা দেখতে লাগলাম। মুঠোয় এঁটে যায়,এমন কিছু একটা ধরে আছে এক তরুণ। আনারসের মত খাঁজকাটা সেটার পুরো শরীরে। তরুণ সেটা দিয়ে লোফালুফি খেলছে। আমি আতংকে চোখ বন্ধ করে ফেললাম। এটা যদি ফাটে,এখন?
হঠাৎ কে যেন হন্তদন্ত হয়ে ছুটে এলো সেখানে। উত্তেজিত গলায় বলল,
"আসাদ ভাই, মিলিটারিরা সামনে অ্যামবুশ পেতে রেখেছে। আমাদের বোধহয় আর আগানো ঠিক হবেনা।"
"তুমি কী করে বুঝলে?"
"ফরিদ কে চারপাশ দেখতে,গাছে চড়তে বলেছিলাম। ও নেমে এসে জানালো,জঙ্গলের বাইরেই মিলিটারিদের একটা ব্যারিকেড। ওরা বেশ প্রস্তুত হয়েই অপেক্ষা করছে। একযোগে যদি এগিয়ে আসে এখন?"
"কিন্তু আমরা এতগুলো অসুস্থ মানুষ নিয়ে,এই জঙ্গলে বসে থাকতে তো পারিনা! এদের চিকিৎসা,বিশ্রাম দরকার।"
"আমরা এখন যুদ্ধ ও তো করতে পারিনা,আসাদ ভাই! সবাই ক্লান্ত। যথেষ্ট অস্ত্র সাথে আছে,এটা ঠিক!"
"আসাদ ভাই,আপনি অন্যদের নিয়ে চলে যান। ঐ শুয়োরের বাচ্চাগুলোকে আমি দেখছি!"
বাবুর কন্ঠ আশ্চর্যরকম শীতল। আমি ভয় পেয়ে গেলাম ওর দৃষ্টি দেখে। সেখানে এত শূণ্যতা! ইচ্ছে হলো চেঁচাই। জমে থাকা ক্ষোভ,কষ্ট বেরিয়ে আসুক। পুরো পৃথিবী ভেঙ্গে পড়ুক,সেই চীৎকারে! এসময় গোলাগুলি শুরু হলো! আমরা মাটিতে বসে পড়লাম। সবাই ধীরে ধীরে আড়াল খুঁজে নিচ্ছি। বাবু আমাদের পাশে এসে বসল। হাঁফাতে হাঁফাতে বলল,
"ভাইয়া,অনুমতি দিন।"
আসাদ ভাইকে কেমন যেন দ্বিধাগ্রস্ত মনে হল। মনে হল,সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছেন। একহাতে মাথা চুলকাচ্ছেন খুব মনযোগ দিয়ে। তার এই ভঙ্গীর সাথে আমি পরিচিত। এখন তিনি খুব অপ্রিয় সিদ্ধান্ত নেবেন। পিঠের নীচে শক্ত কিছুর অস্তিত্ব টের পেয়ে,ওটা হাত দিয়ে টেনে নিলাম।
হাতের মুঠোয় জায়গা হয়ে যায়,এমন দুটো কাল বস্তু। সারা গায়ে আনারসের মত খাঁজকাটা। তরুণটা বলেছিল,এগুলো নাকী কিলার মেশিন।
কিলার মেশিন!!!
বিদ্যুৎচমকের মত সব প্রশ্নের উত্তর পেয়ে গেলাম আচমকাই। আমি এখন জানি,আমার এই অর্ধমৃত জীবনের উদ্দেশ্য কী! শরীরের সমস্ত শক্তি একত্র করে,লাফ দিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে ছুটতে লাগলাম। এঁকেবেঁকে ছুটছি। পেছন থেকে সবাই হায় হায় করে উঠল। একাধিক ছুটন্ত পা জোড়ার শব্দ পেলাম। না তাকিয়েও বুঝতে পারলাম,বাবু আর আসাদ ভাই পিছু নিয়েছেন। ছোটার মাত্রা বাড়িয়ে দিলাম। এটা আমাদের এলাকা। আমি জানি কীভাবে চলতে হয়। মাথায় তখন হাজারো চিন্তা। স্মৃতি। মা। মায়ের শাসন। ভালবাসা। অলস বিকেলের গল্প। আঁচলমাখা রক্ত। বাবা। বাবার রক্তাক্ত শরীর। রুনু। ওর সেই ছড়া। নাকী কান্না। শেষবারে শোনা ওর সেই আর্তনাদ। আসাদ ভাইয়ের হাসি। রাগ। বাবুর সাথে করা ঝগড়া। বাবুর ফ্যালফ্যালে দৃষ্টির অসংখ্য আবেগ। হাহাকার।
"হেনা,লক্ষী বোন আমার। দাঁড়া!"
ওর কথা কটা কানে বাজতে লাগল। ছোটার মাত্রা আরো বাড়িয়ে দিলাম। ঐতো খাকি পোশাকের হায়েনাগুলোকে দেখা যাচ্ছে। জলিল শয়তানটাকে ও এক নজর দেখলাম। আর একটু। শরীরটা যেন ভেঙ্গে পড়তে চাইছে। দুই হাতের মুঠো দেখলাম। কাল ছোট্ট আনারস। নীরিহদর্শন কিলার মেশিন। টান দিয়ে পিনগুলো খুলে নিলাম। ঠিক সে সময় বেশ শক্ত একটা ধাক্কা খেলাম বুকে। হাতের উল্টো পিঠ দিয়ে দেখি,সেখানে রক্ত। লাল সূর্যটার মত সেই রক্ত। পেছন থেকে বাবুর বুকফাটা আর্তনাদ কানে এলো। সে এক নাগাড়ে চেঁচিয়েই যাচ্ছে। কালো আনারস দুটো সর্বশক্তি দিয়ে ছুঁড়ে দিলাম। বিকট একটা বিস্ফারণ। আমি বেশদূরে ছিটকে পড়লাম। কে যেন ছুটে এসে,মাথাটা পরম মমতায় কোলে তুলে নিল। তাকিয়ে দেখি,বাবু। আমার পিঠাপিঠির ভাইটা। চুপচাপ থাকা ভাইটা। আজ চেঁচিয়ে কাঁদছে। তার আর্তনাদে ভেতরটা ভেঙ্গে যেতে লাগল আমার। রাজ্যের ক্লান্তি সারা শরীরে। বাবুকে বললাম,
"আমি কিন্তু তোর বড়! বুবু ডাকিসনা কেনরে?"
বাবু কখনও যা করেনা,করেনি,আজ তা করল।
"যাসনে,হেনাবু...."
আমি আর কিচ্ছু শুনিনি। কিচ্ছু না! সমস্ত পৃথিবীর আলো নিভে গেল। চারপাশে সীমাহীন শূণ্যতা। আচ্ছা, এটাই মৃত্যু?
শব্দহীন।
আলোহীন।
হাহাকারময়।
আহারে!
আমি মরে গেলাম?
চেনা পৃথিবীটা আর আমার নয়?
অচেনা হাহাকারে দুমড়ে মুচড়ে যেতে লাগল সব।
এত কষ্ট!
এত কষ্ট!
এত কষ্ট!!!
পরিশিষ্ট : জানালার গ্রীলের পাশে একটা ইজি চেয়ার। পঞ্চাশ ছুঁই ছুঁই এক বৃদ্ধা বসে আছে সেখানে। ঝাপসা দৃষ্টি মেলে আকাশ দেখছে। কান পেতে রেখেছে সাবধানে। রোজ এই সময়টায় বাতাসে একটা পরিচিত ছড়া শুনতে পায় সে! কে যেন দুষ্টু দুষ্টু গলায় বলে,
"রুনুঝুনু টুনটুনু,
রাগ করেছে রাগ!
গল্প নাকী শুনবে রুনু,
আমি বলেছি,ভাগ!"
বৃদ্ধা ফিসফিসিয়ে বলে,
"হেনাবু,তুমি আমাকে ভালবাসোনা কেন?"
(সমাপ্ত)

Post Comment

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন