রবিবার, ২৯ মার্চ, ২০১৫

যে গ্রামের মানুষ একটানা ঘুমায় ৭ দিন!

ঘুমবিলাসী অলসদের জন্য প্রতিবেদনটা চমৎকার। শিরোনাম দেখেই হয়তো ঠিক করে ফেলেছেন,
ঠিকানা জোগাড় করে চলে যাবেন ঘুম পাড়ানি গ্রামে। এর পর আয় ঘুম আয়…
কিন্তু বাস্তবে ঘুম পাড়ানি গ্রামের বাসিন্দাদের ঘুমুতে ঘুমুতে ভীত সন্ত্রস্ত অবস্থা। ২০১০ সালের পর থেকে এরা ভুলে গেছেন ঘুম পাড়ানি পিসি মাসির ছড়া। এখন হয়তো প্রতিদিনই উল্টো ছড়া কাটেন, যা ঘুম যা…। কাজাখিস্তানের উত্তর এলাকায় পাহাড়ি উপত্যকা কালাচি। এলাকাটা একসময় সুভিয়েত ইউনিয়নের আওতায় ছিলো।
তখন এর পাশেই ছিলো তেজষ্ক্রিয় পদার্থ ইউরেনিয়ামের খনি। ইউরেনিয়াম উত্তোলন শুরু হওয়ায় কালাচির পার্শ্ববর্তী শহর ক্র্যাসনগোরকসক ছেড়ে লোকজন চলে যায়। বর্তমানে শহরটি
একটি পরিত্যক্ত প্রেতপুরী। আর কালাচি গ্রামে বাসিন্দারা থেকে গেলেও এরা তন্দ্রায় আচ্ছন্ন। অনেকে ধারণা করছেন এ খনি খাদ থেকে বিকিরণের কারণেই যখন তখন ঘুমে ঢলে পড়ছেন কালাচি গ্রামের বাসিন্দারা। কিন্তু আসল রহস্য এখন পর্যন্ত কেউ উদঘাটন করতে পারেন নি।
কালাচির বাসিন্দা আলসু শেলাডেভা বলেন, খনিখাদ থেকে প্রায়ই মিষ্টি এক ধরনের গন্ধ বেরিয়ে আসে। খনি থেকে বাতাস ও ধুয়া আসে। আরেক বাসিন্দা ইগোর সামুসেনকো বলেন, আমার ছেলেটা সারাদিন টই টই করে ঘুরে। কিন্তু ঘরে ফিরলেই তন্দ্রায় আচ্ছন্ন হয়ে যায়। ঢলে পড়তে থাকে বিছানায়। কেউ তাকে জাগাতে চাইলে চোখ খোলার চেষ্টা করে। কিন্তু পারে না। তিনি জানান, কালাচি গ্রামটি ঘুমের উপত্যকা নামেই পরিচিত। দিন নেই, রাত নেই হঠাৎ হঠাৎই লোকেরা ঘুমে ঢলে পড়ে। ঘুমের ওপর মোটেও নিয়ন্ত্রণ নেই বাসিন্দাদের।
স্থানীয় বেলকোভা রাশিয়ান সংবাদমাধ্যম রাশিয়ান টুডেকে জানান, ২০১০ সাল থেকে এখানে ঘুম রোগ শুরু হয়। এ সমস্যাটি এর পর আরো দেখা দিতে থাকে।

প্রাথমিকভাবে তিনিও আক্রান্ত হন। তখন ধারণা করা হয় তিনি ‘ইশচেমিক স্ট্রোকে’ আক্রান্ত হয়েছেন। কিন্তু পরে দেখা গেছে তার প্রতিবেশীরাও ঘুমে ঢলে পড়ছেন। ছোট বড় নির্বিশেষে সবাই তন্দ্রায় ঢুলতে শুরু করেন। ধীরে ধীরে মহামারি আকারে পরিণত হয় ঘুম রোগ। এ বছর সেপ্টেম্বরের এক তারিখে স্কুলের এসেম্বলিতে হঠাৎ করেই ছাত্ররা ঘুমিয়ে পড়ে।
এ ব্যাপারে স্থানীয় শিশু হাসপাতালের জৈষ্ঠ্য চিকিৎসক কাইর আবদুরাখমানোভ বলেন, সব শিশুদের সিটি স্ক্যান করে দেখা হয়েছে। এরা সবাই ব্রেইন ‘ওয়েডিমা’য় আক্রান্ত। এ ছাড়া এদের স্নায়বিক সমস্যা পাওয়া যায়নি। মস্তিষ্কে কোনো প্রদাহের চিহ্নও পাওয়া যায়নি।
চিকিৎসকরা জানিয়েছেন ‘ওয়েডিমা’ আক্রান্তদের মস্তিষ্কে তরলের প্রবাহ বেড়ে যাচ্ছে। স্রেফ এতটুকুই। কিন্তু কেন বেড়ে যাচ্ছে এ ব্যাপারে কিছুই বলতে পারেন নি। তবে স্থানীয়রা বলছেন, কালাচিতে অনেক বিষাক্ত বর্জ্য রয়েছে। কারো দাবি ইউরেনিয়ামের খনিই এর জন্য দায়ি।
কিন্তু চিকিৎসকরা বলছেন, ইউরেনিয়াম বিকিরণের কারণে এ অবস্থা হচ্ছে না। এর আগে যেসব শ্রমিক খনিতে কাজ করেছেন, তারা ঘুম রোগে আক্রান্ত হন নি। সম্ভবত দূষিত পানির প্রভাবেই এটা হচ্ছে।
লওবোরো ইউনিভার্সিটির স্লিপ রিসার্চ সেন্টারের ঘুম বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক জিম হর্ন বলেন, আমার কাছে এটিকে ঘুম রোগই মনে হচ্ছে। এর প্রভাব সবসময় থাকে না। ঘুম থেকে জাগার পর আবার স্বাভাবিক হয়ে যায় রোগী। সম্ভবত কোনো একটা ভাইরাসের প্রভাবে এটা হচ্ছে
সুত্রঃ টেকটিউন  

Post Comment

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন