শনিবার, ২৮ ফেব্রুয়ারী, ২০১৫

" এই তো প্রেম "

১০-১০-১০
সন্ধ্যাটা আসি আসি করছে । একটু পরই ঝুপ করে সূর্যটা ডুববে....অদ্ভূত একটা ভালো লাগায় আচ্ছন্ন হয়ে আছে আমার মন। অফিস আওয়ার শেষ হবার আগেই আজ বেরিয়ে এসেছিলাম। যত দ্রুত সম্ভব বাসায় যেতে হবে যে আমাকে। কাল রাতে কথাটা আসিফকে বলতেই পারিনি। আর সকালে তাড়াহুড়ার চোটে বলাই হয়নি। যথন জানলাম তখন অনেক রাত,হঠাত্‍ ঘুম ভেঙে যাওয়ায় বারান্দায় বসে গান শুনছিলাম। ফোনটা অন করতেই মেসেজটা এলো। আমি তো খুশিতে স্থান-কাল-পাত্র ভুলে একটা ছোটখাটো চিত্‍কারই দিয়ে উঠলাম। তারপর ছুটে ঘরে এলাম। গভীর ঘুমে ওকে দেখে এতো মায়া লাগছিলো ! ওর কপালে আলতো একটা চুমু খেয়ে অনেকটা সময় ওর পাশে বসে রইলাম ।
সকালে শুধু গাড়িতে বসে এতটুকু বলেছিলাম, ' আজ একটু তাড়াতাড়ি বাসায় এসো । কাজ আছে । '

কিন্তু ,কথাটা এমন সাদামাটা ভাবে বললে হবে?? সকালে শাহবাগে অনেক গোলাপ একসাথে পাওয়া যায়। এখন প্রায় সাড়ে ৩টা বাজে। কয়টা পাওয়া যাবে জানি না, আর পাওয়া গেলেও কতটা তাজা আছে কে জানে? তবু ও গাড়িটা ঐদিকেই ঘুরালাম।
মেয়েরা এমনিতেই খুঁতখুঁতানি টাইপের হয় আর আমি তো আর এক ডিগ্রী উপরে। এই দোকান থেকে দুইটা তো ঐ দোকান খেকে তিনটা এভাবে কোনোমতে ১০০টা লাল গোলাপ কেনা হলো। একটা শান্তির নিঃশ্বাস ফেলে হলমার্কসে আসতেই পড়লাম বিশাল জ্যামে। অন্যদিন হলে ইতোমধ্যে জ্যামকে কয়েক দফা গালিগালাজ করা হয়ে যেতো। কিন্তু আজ আমার সবকিছুই ভালো লাগছে । সব কিছু ।
একটা লাভ শেইপড ব্ল্যাক ফরেস্ট কেক কুপারস থেকে কিনে সোজা বাসা । পুরাটা ঘর সাজাতে হবে । আসিফের পছন্দের সব আইটেম আমাকে রান্না করতে হবে । অনেক কাজ ।
কাজ করতে করতে কখন যে সময় গড়িয়ে গেলো টের ও পেলাম না। একটু পর পর বারান্দায় এসে উঁকি দিচ্ছি । ছেলেটা আসেনা কেন্ ? আকাশটা কেমন লালচে হয়ে গেছে। ৭টা বাজতে চলেছে। দেখাই নেই তার। কেমন অস্থির লাগছে। একটু আগে গোছল থেকে বের হয়েছি। চুলটা দ্রুত শুকানোর চেষ্টা করছি। কিন্তু এত্ত বড় চুল কি এত সহজে শুকায়? কতবার চুল কাটতে চেয়েছি ,আসিফের জন্যই পারিনা। ও আমার চুল গুলো এতো পছন্দ করে,প্রায়ই দেখি চুল নিয়ে খেলছে। খুব ছেলেমানুষী করে মাঝে মাঝে। ছেলেটা কখনোই বড় হলোনা আর !
সব সাজিয়ে বারান্দায় বসে আছি। কয়েকবার কল দিয়েছি। ফোনটা ধরেই দুঃখী দুঃখী গলায় বলে ,'এইতো জানটা,চলে এসেছি প্রায়। রাস্তায় এতো জ্যাম ! ইচ্ছে করছে উড়ে চলে আসি আমার সোনাটার কাছে। ময়না পাখি টিয়া আমার আর একটু প্লিইইইজ ।'
এরপর কি আমি রাগ করতে পারি। সব গলে পানি হয়ে যায় ।
৭টা ৩৫ বাজে ।
বারান্দায় বসে হারিয়ে গেলাম ভাবনার রাজ্যে। সেই পুরানো দিনগুলাতে। বিয়ের আগে ১১ বছর প্রেম করে তবেই বিয়ে করেছি। খুব ছেলেমানুষী করতাম দুজন। সবাই বলতো জাস্ট মোহ ,বড় লোকের ছেলে পেলে চলে যাবো আমি ,সুন্দরী মেয়ে পেলে চলে যাবে ও , বেশীদিন থাকবে না,সেম এইজের প্রেম টিকে না ব্লা ব্লা ব্লা.....

সব আশঙ্কা মিথ্যা প্রমাণ করে সবার অমতেই এক বছর আগে দুজন গাটছড়া বেঁধেছি। পরে অবশ্য সবাই মেনে নিয়েছে। এখন তো সুখেই আছি। ভালোবাসা এতটুকও কমেনি আজো। আমার ১৮তম জন্মদিনে ওর কাছে একটা স্পেশাল গিফট চেয়েছিলাম। একটা BABY। আমার বাচ্চাপ্রীতি+বাচ্চাদের আমিপ্রীতি তো সর্বজনবিদিত। তাই তখন এই বোকা মেয়েটাকে বলেছিলো আসিফ ,'নিশ্চয়ই দিবো। আর কয়টা দিন ই তো মাত্র।'
আমি তো একসময় অধৈর্য হয়ে ওকে বললাম একটা বেবী এডপ্ট করলে কেমন হয় ??এ কথায় ওর রিএকশনটা এখনো চোখে ভাসছে। আসলেই বাচ্চার জন্য মাথা পুরা গেছিলো আমার। সেই চাওয়ার ৭টা বছর পর আজ অবশেষে...
ওহ্ ,আসিফের জন্য তো মাধবীলতা আনা হয়নি আজ। মাধবীলতার বিশাল ঝাড়টা ছাদ পর্যন্ত পৌঁছেছে। প্রতিদিন কিছু কিছু এনে বেডরুমে রাখি। এই গন্ধ না পেলে আমার পতিদেবের তো আবার ঘুমই আসবে না। মাধবীলতার গন্ধটা আসলেই কেমন পাগল করে দেয়। হাতের বকুল ফুলের মালাটা আবার টেবিল ল্যাম্পের উপর রেখে দিলাম। এই মালাটা আমি ৮টা বছর ধরে আগলে রেখেছি। আমার আসিফ বাউটার আমাকে দেয়া প্রথম কোনো ফুল ।
ঘর থেকে বেরুতেই দেখি পাশের বাসার তানিম সাহেব। ভদ্রলোক খুবই বোকাসোকা টাইপের। তার দিকে এক নজর তাকিয়েই ছাদে ছুটলাম। দরজাটা আর লক করলাম না। বাউ টা আজ চাবি রেখেই চলে গেছে। এসে পড়লে আবার দাঁড়িয়ে থাকতে হবে তাকে । জাস্ট যাবো আর আসবো আমি ।

আজকে একটু বেশীই নিলাম। স্পেশাল দিন যে ! এক মিনিটের মাঝেই বাসায় চলে এলাম। বেডরুমে ফুলগুলো ছোট্ট ফুলদানিতে রাখতেই হঠাত্‍ একটা নড়াচড়া দেখতে পেলাম । that means,উনি ঐ ফাঁকেই ঘরে ঢুকে পড়েছেন ! এবার আমাকেই Surprise দিতে চান? তাতো হবেনা। চুপটি করে দাঁড়িয়ে রইলাম। এমন ভাব যেনো বুঝতেই পারিনি উনি এখানে আছেন ! পায়ের শব্দ কাছে আসতেই ঝট করে ঘুরে জড়িয়ে ধরলাম আসিফকে এবং চমকে উঠলাম আসিফের জায়গায় তানিম সাহেব কে দেখে। আধো আলোয় তার জ্বলন্ত চোখ দেখে আমার বুকটা ধ্বক করে উঠলো । আমার সারা শরীর থরথর করে কাঁপছিলো ! আমি এক পা এক পা করে পিছাতে লাগলাম । হঠাত্‍ পৃথিবীটা অন্ধকার হয়ে গেলো চোখের সামনে । আমি শুধু একবার আসিফকে ডাকলাম ফিসফিস করে ......

১৩-১২-১১
চোখ মেলে তাকাতেই দেখি একটা অচেনা ঘরে শুয়ে আছি। চারপাশটা কেমন ঘোলাটে। আশেপাশে কেউ নেই। আসিফ ও নেই? আমার বাচ্চা? ও ভালো আছে তো? পেটের উপর হাতটা রাখতেই কেমন যেনো নিশ্চিত বোধ করলাম। এইখানটায় আছে ও। ও ভালো আছে ! এইটাই ওর সবচেয়ে নিরাপদ আশ্রয় ! এইখানে তো ও ভালো থাকবেই। অনেক কস্টে উঠে বসলাম। এদিক ওদিক তাকিয়ে বুঝতে পারলাম এটা একটা হসপিটাল। মনটা যেনো কেমন করে উঠল। আমাকে এখন থেকে অনেক সাবধানে থাকতে হবে! আমার কোন ভুলে যেনো আবার ওর কিছু হয়। নাহ্,ডায়েটিং টা আপাতত বন্ধই করে দেই। আগে তো বাচ্চা , তারপর অন্য কিছু ! বিয়ের আগে চাইতাম আমার যেনো মেয়ে হয়,এখন মনে হচ্ছে ছেলে হোক আর মেয়ে আমার বাচ্চা হলেই চলবে। কিন্তু তাকে তো ভালো রাখতে হবে। আচ্ছা , আসিফ কোথায় ? ওকে অনেক দেখতে ইচ্ছা করছে । ও কি জানেনা আমি অসুস্থ আর এখানে এডমিট ! না না , তা কি করে হয়? আমি অসুস্থ আর আমার জানপাখিটা জানে না এটা তো হতেই পারে না। ও নিশ্চয়ই কোন কাজে আটকে গেছে ।
আচ্ছা আমি অসুস্থ কেনো? কি হয়েছে আমার? আমি অসুস্থ হলে তো আমাদের বাবুটার ও সমস্যা হতে পারে। ভয় ভয় লাগছে। কেউ নেই কেনো কোথাও?? হাতটা অজান্তেই বাবুটার কাছে চলে গেলো। ঠিক আছে তো আমার বাবুই সোনা ! কেনো জানি মনে হচ্ছে আমি টের পাচ্ছি,আমি আমার টুকুন সোনার অস্তিত্ব টের পাচ্ছি ! দরজায় শব্দ হতেই ঘুরে তাকালাম । আসিফ চলে আসছে মনে হয়। দেখি যে মা ! আমাকে দেখে এক পলক চমকে তাকালো। তারপর ছুটে এসে আমাকে জড়িয়ে ধরে মরাকান্না জুড়ে দিলো ! আরে বাবা আমি তো ঠিক আছি। এমন কান্নার কি দরকার ??
মা আসিফ কোথায় ?
মা যেন একটু থমকে তাকালো ।
আসিফ ?? ও মনে হয় কাজে ব্যস্ত ।
আমি স্পষ্ট বুঝতে পারলাম মা কিছু একটা লুকাচ্ছে। কিছু বলব ভাবছি ঘরটা আলো করে আমার রাজপুত্রটা সামনে এসে দাঁড়ালো।আমি মুগ্ধ হয়ে দেখছি ওকে। মনে হচ্ছে কত্ত যুগ পর দেখছি আমার সোনাটাকে। মা কখন উঠে গেছে টের পাইনি। আসিফকে যেনো কেমন বিষন্ন দেখাচ্ছে ! কি হয়েছে ওর ?

কেমন আছো নিশা ?
এখন অনেক ভালো আছি। তোমাকে না দেখে এতক্ষণ কেমন অস্থির লাগছিলো !
তাই ?

একটু যেনো হাসার চেষ্টা করলো আসিফ ।
ওর মেকী হাসিটা ঠিকই বুঝতে পারলাম ।
তুমি ভালো নেই , তাই না আসিফ ?
নাতো,একদম ঠিক আছি। তুমি একটু রেস্ট নাও। আমি একটু ডক্টরের সাখে কথা বলে আসি ।

ও কিছু নিয়ে টেন্সড। আমাকে বললোনা কেনো? আর ও বেবীটার কথা কিচ্ছু জানতে চাইলো না কেনো? ও কি জানেনা? ওকে তো আমি ঐদিন.....হঠাত্‍ ছবির মতো সব চোখের সামনে স্পষ্ট হয়ে উঠলো । আবার আমার মাথাটা কেমন চক্কর দিয়ে উঠছে.....

২৩-১২-১১
আমাদের নতুন ফ্ল্যাটে আজ উঠতে যাচ্ছি। আমি একা। আমার বাবুইটাকে নিয়ে। ওরা আর আমাকে চায় না। আমার বাবুনটাকে ওরা মেরে ফেলতে চায়। আমি কি এতোটা স্বার্থপর? নিজের সুখের জন্য,স্বামীর ঘরে,শ্বশুড়বাড়ি ফিরে যাবার জন্য আমার বাচ্চাটাকে মেরে ফেলবো ! ও টুকুন সোনা,মন খারাপ করোনা তুমি। আর কেউ তোমায় ভাল না বাসুক তোমার মা তোমায় ভীষণ ভালবাসে,সারাটাজীবন এই বুকটাতে আগলে ধরে রাখবে। কেউ কিচ্ছু করতে পারবে না তোমার ! শুধু যদি তোমার বাবাটা আমাদের সাথে থাকতো ! আসিফের জন্য মন কেমন করছে আমার ! কিন্তু তোমার দাদুমনি যে তোমার বাবাকে আসতে দিবেনা,সোনা !

আমার খুব কান্না পাচ্ছে। নিজের বাচ্চাকেই মিথ্যা বলছি আমি ! আসিফ যে নিজেই আসবেনা। ওরা কেউ তো আমাকে বিশ্বাসই করলোনা। এই বাচ্চাটা আমাদের। আমার আর আসিফের। আমাদের দুজনের কত ভালোবাসায় গড়া স্বপ্নটাকে ওরা এক কথায় অস্বীকার করলো !
আমার কানে এখনো বাজছে ঐকথাটা ...
"এ ঘরে যদি ফিরে আসতে চাও তবে তোমার ঐ পাপের চিহ্নকে মুছে ফেলে আসতে হবে।"

মূহুর্তে পুরো পৃথিবীটা কাঁচের টুকরার মত ভেঙে পড়লো আমার চোখের সামনে। আমি মাটিতে বসে পড়লাম।
পাপের চিহ্ন ?? আমার বাবুটাকে ওরা পাপের চিহ্ন বললো? ইচ্ছা করছিলো চলন্ত একটা ট্রেনের সামনে গিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ি...
আসিফ একটা কথা ও বললো না।
আমি শুধু ওর দিকেই তাকিয়ে ছিলাম অবাক দৃষ্টিতে। নিজের স্ত্রীর সম্মান না হয় শেষ,কিন্তু বাচ্চাটা....?
পৃথিবীর সবচেয়ে কঠিন একটা সিদ্ধান্ত নিয়ে জীবনের যুদ্ধে পরাজিত বিধ্বস্ত আমি ক্লান্ত পায়ে হেঁটে চলে এলাম।

এবোরেশন !
স্বামীর ঘর ফিরে পাবার জন্য এ সিদ্ধান্ত নেইনি আমি। অসম্মান আর ঘৃণার জীবন থেকে আমার বাবুটাকে বাঁচাবার জন্য এই পথ বেছে নিলাম। নিষ্ঠুর সমাজ কাছে হেরে যাওয়া এক অসহায় মা আমি !
আমি খুন করতে যাচ্ছি ! খুন ! নিজের বাচ্চাকে যে মা খুন করে তার কি অধিকার আছে এই পৃথিবীতে বেঁচে থাকার??
না। একটা আর্তচিত্‍কার যেনো বেরিয়ে এলো ভিতর থেকে। মনে হলো আমার BABY টা আমাকে বলছে ,"আমাকে মেরো না তুমি মা। আমার কিচ্ছু লাগবেনা মা তোমাকে ছাড়া।"
আমি আসলেই পাগল ! জীবন থেকে কেনো পালাবো আমি? তারচেয়ে বরং পালিয়ে যাই এই চিরচেনা জগত্‍ থেকে। সবার থেকে অনেক দূরে। সব কিছুর আড়ালে ....
জীবনের শুরু যেখানে আর স্বপ্নের শেষ। চাকরিটা তো আছেই। বাবুকে আমি একাই বড় করবো ! আমি আর আমার বাবু ! আমাদের ছোট্ট পৃথিবী !
ছোট্ট ট্রলি ব্যাগটা অনেক কষ্টে নিয়ে নতুন বাসায় এসে উঠলাম মাত্র। চাবি খুলে অন্ধকার বাসায় পা দিতেই কেমন যেনো ভয় লাগলো। লাইট জ্বালাতেই ফ্রিজড হয়ে গেলাম আমি একবারে ।

জলজ্যন্ত আসিফ দাঁড়িযে আছে আমার সামনে ।

তুমি ? এখানে কিভাবে?
ভুলে যাচ্ছো কেনো নিশা? এক কপি চাবি তো আমার কাছেও থাকে।
ওহ্ ,হ্যাঁ। কিন্তু তুমি এখানে ?
কেনো? এইখানে কি তুমি অন্য কাউকে এক্সপেক্ট করছিলে !
না । কিন্তু তোমাকেও তো আশা করিনি।
কেনো আশা করনি? আমার সংসারে আমি থাকবো না?
তোমার সংসার??
তো? তিন তিন বার বিয়ে করেছি তোমাকে। একবার ফোনে,একবার কোর্টে আর একবার রীতিমন অনুষ্ঠান করে সবার সামনে ! আর তুমি বলছো এটা আমার না??
কিন্তু তুমিতো ...
আমিতো কি? কি ভেবেছো তুমি? ছেড়ে দিবো তোমাকে? দেড় বছর আগে একদিন তোমার জন্য সব ছেড়ে চলে এসেছিলাম। আজ যেখানে তোমার সাথে আমার বাচ্চাটাও আছে আমি আসবো না ?
ওর শেষ কথাটায় আমি চমকে উঠলাম। কিছুতেই সামলাতে পারলাম না নিজেকে। ছুটে গিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়লাম ওর বুকে।
তুমি বিশ্বাস করো আসিফ । এই বেবীটা সত্যি আমাদের । আমাদের দুজনের !
ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছিলাম আমি। আর ও আমার চুলে হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলছিল,
আমি জানি । কিচ্ছু বলতে হবে না ।
তুমি কি জানতে ?

ঐদিন সকালে তোমার ফোনে এলার্ম বন্ধ করতে গিয়ে আমি মেসেজটা দেখেছিলাম। ঐ রাতে তোমার জন্য গিফট ছাড়া খালি হাতে কি করে ফিরি? আর ঐ গিফট কিনতে গিয়ে যে এত দেরী হয়ে গেলো। সবটাই আমার দোষ। আমি টাইমলি পৌছালে এমনটা হতো না। আমার জন্য তুমি অনেক করেছো। অনেক অপমান অনেক কিছু সহ্য করেছো।আর না ।
আমি কিছুতেই কান্না বন্ধ করতে পারছিনা। আমি ওকে কি করে ভুল বুঝলাম !
তুমি চলে যাবার পরই এখানে চলে এসেছি। জানতাম এখানেই আসবে তুমি !
কিভাবে ?
তোমার মন কখন কি ভাবে আমার চাইতে তা তুমি ও ভালো জানো না নিশা। আমি জানতাম তুমি প্রথমেই ভাববে সুইসাইড এর কথা,তারপর এবোরেশন। আর তারপর কোন কিছু না করে কাঁদতে কাঁদতে সবাইকে ছেড়ে এ বাসায় এসে উঠবে। ঠিক বলেছি না?
আমি অবাক হয়ে আমার আসিফের দিকে তাকিয়ে আছি। তাকিয়েই আছি ।
আর ও বলেই চলেছে ,দেখো, কত খাটা খাটনি করে ঘরটা সাজিয়েছি তোমার জন্য। ঐ রাতে তুমি যেমন সাজিয়েছিলে অত ভালো না হলেও খারাপ ও হয়নি। তাই না ?

ও,আমি কিন্তু রান্নাও করেছি। নিজের হাতে। তোমার মত একশটা করতে পারিনি ,হয়তো অমন মজা ও হয়নি। কিন্তু ভালবাসা ঢেলে দিয়ে বানিয়েছি....
বুঝেছো,সোনাবৌ আমার???
আমি দ্বিতীয় দফায় ওর বুকে ঝাঁপিয়ে পড়লাম।
আর ও দুহাতে আমাকে আগলে ধরে কানের কাছে ফিসফিস করে বলতে থাকলো "ভালবাসি ভালবাসি ভালবাসি ভালবাসি......"

Post Comment

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন